যে কারণে বিতর্কিত মাওলানা সাদ



শতবছর আগে দ্বীন ও ইসলামের দাওয়াতি কাজকে তরান্বিত করতে মাওলানা ইলিয়াছ শাহ (রাহ.) দিল্লির নিজামুদ্দিন মসজিদ থেকে তাবলিগের কাজ শুরু করেন। মাওলানা ইলিয়াছ (রাহ.)-এর ছেলে মাওলানা হারুন (রাহ.)। তারই ছেলে হলেন মাওলানা সাদ কান্ধলভী।

দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের বর্তমান মুরব্বী সাদ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় কুরআন, হাদিস, ইসলাম, নবি-রাসুল ও নবুয়ত এবং মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন।

তিনি তার এ সব আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য দেওবন্দসহ বিশ্ব আলেমদের কাছে বিতর্কিত হয়েছেন। তাঁর বিতর্কিত মন্তব্যগুলো ‘সা’আদ সাহেবের আসল রূপ’ নামে একটি ছোট্ট বই আকারে প্রকাশ করেছেন জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার মুহাদ্দিস, তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বী এবং দ্বন্দ্ব নিরসনে ভারত সফরকারী ৫ সদস্যের অন্যতম মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক।

তাঁর লিখিত ‘মাওলানা সাদ সাহেবের আপত্তিকর’ কুরআন-হাদিস বিরোধী বক্তব্যগুলো তুলে ধরা হলো-

> ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকা>> 
ভোটের সময় চিহ্ন হিসাবে (আঙুলে) যে রং লাগানো হয়, তার কারণে নামাজ হয় না। তাই ভোট না দেয়া উচিত।

> কুরআন শরীফের ভুল ব্যাখ্যা>>
 বিভিন্ন আয়াতে তিনি বলেন, মুফাসসিরিন এই আয়াতের কোনো এক তাফসির করেছেন, ওলামা কোনো এক তাফসির করে থাকেন, কিন্তু আমি এই তাফসির করে থাকি। এটা শুনো। এটাই সঠিক তাফসির!

> ইসলাম ও ওলামাদের বিরোধীতা>>
ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রাখা হারাম এবং পকেটে ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রেখে নামাজ হয় না। যে আলেমগণ ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল রাখাকে ‘জায়েজ’ বলেন, তারা ‘ওলামায়ে ছু’। বার বার কসম খেয়ে তিনি বলেন, তারা হলো ‘ওলামায়ে ছু’। এমন আলেমরা হলো গাধা! গাধা! গাধা!> জাহেলি ফতোয়া>> মোবাইলে কুরআন শরীফ পড়া এবং শোনা; প্রস্রাবের পাত্র থেকে দুধ পান করার মতো! (নাউজুবিল্লাহ)

> মাদরাসা মসজিদের বেতন বেশ্যার উপার্জনের চেয়ে খারাপ>> 
কুরআন শরিফ শিখিয়ে বেতন গ্রহণ করেন, তাদের বেতন বেশ্যার উপার্জনের চেয়েও খারাপ। যে ইমাম এবং শিক্ষক বেতন গ্রহণ করেন, বেশ্যারা তাদের আগে জান্নাতে যাবে!

> কাওমি মাদরাসা বন্ধ করার অপচেষ্টা>>
 মাদরাসাগুলোতে জাকাত না দেয়া হোক। মাদরাসায় জাকাত দিলে জাকাত আদায় হবে না।

> আওলিয়াদের সঙ্গে শত্রুতা>>
 রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর কেবল তিনজ লোকের ‘বাইআত’ পূর্ণতা পেয়েছে। আর বাকি সবার বাইআত অপূর্ণ। সেই ৩ জন হলেন- শাহ ইসমাঈল শহীদ, মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস এবং মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ।

> সুন্নাত সম্পর্কে জাহেলি মন্তব্য>>
 মাওলানা সাদ সাহেব আযমগড়ের ইজতেমায় এবং অন্যান্য ইজতেমায় একাধিকবার সুন্নাতকে ‘৩ প্রকার’ বলে বর্ণনা করেছেন- ইবাদতের সুন্নাত, দাওয়াতের সুন্নাত এবং আচার-অভ্যাসের সুন্নাত।

> নবিওয়ালা কাজের বিরোধীতা>>
 ‘দাওয়াতের পথ’ হলো নবির পথ, ‘তাসাউফের পথ’ নবির পথ না।

> ভ্রান্ত আকিদা>>
 আজান হলো ‘তাশকিল’ (প্ল্যান-পরিকল্পনা)। নামাজ হলো ‘তারগীব’ (পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উদ্বুদ্ধকরণ)। আর নামাজের পর আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া হলো ‘তারতীব’ (পরিকল্পনার মূল বাস্তবায়ন)।

>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াত ইলাল্লাহর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইশার নামাজকে পর্যন্ত বিলম্ব করে পড়েছেন। অর্থাৎ নামাজের চেয়ে দাওয়াতের গুরুত্ব বেশি।

>> হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম ‘তোমার প্রভুর কাছে আমার কথা বল’ বলে গাইরুল্লাহর দিকে দৃষ্টি দেয়ার কারণে তাকে অতিরিক্ত ৭ বছর জেলখানায় থাকতে হয়েছে।

>> হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম আল্লাহকে ছেড়ে গাছের কাছে আশ্রয় চাইলেন। ফলে শাস্তি ভোগ করতে হলো।

>> মুজিজার সম্পর্ক কেবল দাওয়াতের সঙ্গে। নবুয়াতের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।

>> হজরত মুসা আলাইহিস সালাম থেকে বড় এক ভুল হয়ে গেছে এবং তিনি এক অপরাধ করে ফেলেছেন- জামাআত এবং কাওমকে ছেড়ে তিনি আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য ‘নির্জনতা’ অবলম্বন করেছেন।

>> হজরত মুসা আলাইহিস সালাম কর্তৃক হজরত হারুন আলাইহিস সালামকে নিজের স্থলাভিষিক্ত বানানোও অনুচিৎ কাজ হয়েছে।

>> হেদায়েতের সম্পর্ক যদি আল্লাহর হাতে হতো; তাহলে তিনি নবি পাঠাতেন না।

>> কুরআন শরীফ বুঝে-শুনে তেলাওয়াত করা ওয়াজিব। তরজমা না জেনে তেলাওয়াত করলে তরকে ওয়াজিবের গোনাহ হবে।

>> আপনাদের কাছে সবচাইতে বড় গোনাহ- চুরি, যিনা। ঠিকই এটা বড় গোনাহ; তবে তার চাইতে বড় গোনাহ হলো খুরুজ না হওয়া। তাই হজরত কা’ব ইবনে মালেকের সঙ্গে ৫০ দিন পর্যন্ত কথাবার্তা বন্ধ রাখা হয়।

>> জিকিরের অর্থ আল্লাহ আল্লাহ বা অন্যান্য তাসবিহ পড়া নয়; জিকিরের আসল অর্থ আল্লাহর আলোচনা করা।

>> এই এক তাবলিগই নবুয়তের কাজ। এ ছাড়া দ্বীনের যত কাজ আছে- দ্বীনি ইলম শিখানো, দ্বীনি ইলম শেখা, আত্মশুদ্ধি, কিতাবাদি রচনা করা কোনোটাই নবুয়তের কাজ না।

> আল্লাহ তাআলার হুকুমের সমালোচনা>>
 হজরত মুসা আলাইহিস সালাম দাওয়াত ছেড়ে দিয়ে (আল্লাহর হুকুমে) কিতাব আনতে চলে গেছেন। দাওয়াত ছেড়ে (কিতাব আনতে) চলে যাওয়ার কারণে ৫ লাখ ৭৭ হাজার লোক মুরতাদ হয়ে গেল।

> তাবলিগের নতুন ধারা>>
 আমাদের কাজের সঙ্গে লেগে থাকা সাথীরাই কেবল মাওলানা ইলিয়াস এবং মাওলানা ইউসুফ সাহেবের মালফুজাতই পড়বে। এগুলো ছাড়া (ফাজায়েলে আমল ও ফাজায়েলে সাদাকাতসহ) অন্য কিতাবাদি পড়বে না।

> জিকিরের অস্বীকার>>
সকাল-সকাল কুরআন তেলাওয়াত করা এবং নফল নামাজ পড়ার তো একটা অর্থ বুঝে আসে। কিন্তু আল্লাহ আল্লাহ বলে জিকির করে কী অর্জন হয়? কিছুই অর্জন হয় না!

>> মাদরাসার উস্তাদরা বেতন নেয়ার কারণে দুনিয়াবি ধান্দায় জড়িয়ে আছে। এ কারণে দ্বীনের খেদমতের জন্যও তাদের কিছু সময় দেয়া উচিৎ।

> আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ>>
 কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বান্দাকে জিজ্ঞাসা করবেন, তা’লিমে বসেছিলে কি না? গাশ্‌ত করেছিলে কি না?

> সাহাবায়ে কেরামের ওপর মিথ্যা অপবাদ>>
প্রত্যেক সাহাবী অপর সাহাবীর বিরুদ্ধাচরণই করেছেন।

উল্লেখিত কুরআন-হাদিস বহির্ভূত আলোচনার জন্য ওলামায়ে দেওবন্দসহ বিশ্ব মুসলিমের অন্যতম আলেমগণ তাঁকে ক্ষমা চাওয়া এবং তাওবার আহ্বান জানান।

এসব গোমরাহী কথা-বার্তার অডিও রেকর্ড দারুল উলুম দেওবন্দে সংরক্ষিত আছে।

মাওলানা সাদ সাহেব তাঁর দাদা হজরত ইলিয়াস শাহ (রাহ.)সহ আকাবির আলেমদের মেহনতে তৈরি দাওয়াত ও তাবলিগের ময়দানে ভক্তি দেখিয়ে আম মানুষের জনপ্রিয়তা লাভ করেন। কিন্তু মাওলানা যুবায়রুল হাসান রহ. এর ইন্তেকালের পর পরই মাওলানা সাদ সাহেব তার এ বিতর্কিত-আপত্তিকর মন্তব্য ও বক্তব্য তুলে ধরে আসল রূপে নিজেকে প্রকাশ করেন।

মন্তব্যসমূহ

নামহীন বলেছেন…
NJ Online Casino Bonus 2021 - BBSJON
NJ online casino bonus 2021 | 바카라 Claim 메리트 카지노 고객센터 a first-time bonus of up to $1,000 | 더킹카지노 도메인 Use our NJ online k카지노 casino bonus code SPORTSBOOKBONUS to get a first-time

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বিদায় মাদ্রাসা

বিদায় (কবিতা)

বিদায়! বিদায়! (কবিতা)